অশিক্ষার অন্ধকারে অসহায় ও দরিদ্র শিশুরা
শিক্ষার আলো সমানভাবে ছড়াচ্ছে না আমাদের দেশের দরিদ্র শিশুদের মাঝে। ফলে তারা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। তাই এই শিক্ষা তাদের জীবনে সোনা হয়ে ফলছে না। অকালেই তাদের জীবন ঝরে পড়ছে। কিন্তু এই সমস্যার কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
বর্তমানে বিভিন্ন শিশু উন্নয়ন সংস্থা এই সব পথ শিশু ও হতদরিদ্র শিশুদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছে। কিন্তু এই সুবিধা পাচ্ছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন শিশু। কিন্তু বাকিরা সে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বগুড়া শহরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান স্থান ঘুরে কয়েকজন শিশুর সাথে সাক্ষাত করে জানা গেছে তারা কেন স্কুলে যেতে পারে না বা কেন যায় না।
বগুড়া রেল স্টেশনের জুয়েল (১২) সে স্টেশনে কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে। তার বাবা বিয়ে করে অন্যত্র থাকে। আর সে এই ডিম বিক্রি করে মায়ের সংসারে অর্থ যোগান দেয়। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। স্টেশনের আরেক শিশু হল জলিল। সে ট্রেনে ও প্লাটফর্মে চা বিস্কুট বিক্রি করে। তার বাবা নেই, পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে ২য়। তাই বড় ভাইয়ের মত তাকেই সংসারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে হয়।
এই রকম আর একটি শিশু নয়ন (১১)। জজকোর্ট মোড়ের এক চায়ের দোকানে কাজ করে। সে দিনে ২০/৩০ টাকা আয় করে। সে স্কুলে যায় না। তার বাবা ও মা দু’জনেই কাজ করে । তার ছোট এক বোন আছে। কিন্তু তারপরও তার মা বাবার অসচেতনতার জন্য সে স্কুলে যায় না।আরেক শিশু মলি,যে একজন ফুল বিক্রেতা।তার বাড়ি হাডিপট্টিরএক বস্তিতে। তার মা নেই বাবা আছে। কিন্তু সে প্রতিবন্ধী। তাই কোন কাজ করতে পারে না। এই রকম শাওন, ঝর্না, রহিমাসহ আরও অনেক শিশু তাদের স্কুলে না যাওয়ার নানা সমস্যার কথা জানায়। তার মধ্যে বেশি যে সমস্যা দু’টো গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হল পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও মালিক শ্রেণীর শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি অনীহা। তাদেরকে কেউ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করছে না। ফলে তারা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না। এছাড়া এই সব শিশুদেরকে কেউ পড়ালেখার কথা বলে না বলেও তারা জানায়। তাই এই সব শিশুদের নিরর হয়ে বেড়ে ওঠার দোষ তাদের নয়।
এই দোষ দেশ ও সমাজের। তাদের মালিক ও পরিবারের এবং আমাদের শিথিল সমাজের। আমরা কি পারিনা এসব অসহায়,দরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দিতে???
জাওয়াদুল করিম জীসান, সভাপতি,এনসিটিএফ, বগুড়া।