বিস্ময় ব্যক্তিত্ব !
আবদুর রহমান সালেহ: বাজারে খুচরা বিক্রেতারা যখন পি,সি সরকারের জাদুবিদ্যা বই বিক্রি করছিলো আমার বন্ধু সোহাগ তখন মনোযোগ দিয়ে ভাবতো; কিভাবে পি,সি সরকারের মতো বিখ্যাত জাদুকর হওয়া যায়! মজার মজার জাদু দেখিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়া যায়। অসম্ভব অধ্যবসায়ী সোহাগ বাজারের ক্যানভাসারদের কাছে ধর্না দিয়ে পি,সি সরকার কিংবা জুয়েল আইচের মতো খ্যাতিমান জাদুকর হতে পারেনি বটে। তবে হাতের তালুতে আগুন জ্বালিয়ে একটি ভেল্কি দেখিয়েই আমাদের কয়েকজনের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল ও। অসাধারণ কোয়ালিটি না থাকলে অন্তত জাদুকর হওয়া যায় না। সোহাগের দৃঢ়চেতা পারফরমেন্স দেখে সেদিন মনে মনে এরকম ভাবনারই ঊদয় হয়েছিল।
আমার বন্ধু সোহাগের সেই ভেল্কিবাজির (মতান্তরে জাদুবিদ্যা!) সময়টা ছিল গত শতাব্দীর (১৯৯৯)। প্রাইমারীতে অধ্যয়নরত সময়ের ঘটনা হওয়ায় কিনা জানিনা। স্মৃতির অতল গহ্বর থেকে সেই ঘটনাটি আজকের ২০১৫-তে এসেও যেহেতু হারিয়ে যায়নি, সেহেতু বলাই যায় সোহাগের পারফরমেন্সে বিশেষ কিছু ছিল। সম্পূর্ণ অন্যরকম কিছু। তা না হলে এতদিন পরেও স্মৃতিভা-ার থেকে ঘটনাটি হারিয়ে গেলো না কেন?
প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক। মাধ্যমিক পেরিয়ে মহাবিদ্যালয়। মহাবিদ্যালয়কেও বিদায় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে এসে যখন পি,সি সরকারের জাদুবিদ্যার প্রতি আগ্রহ হারিয়েই যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে পরিচয় হলো অন্য এক জাদুকরের সাথে। আমি জুয়েল আইচের মতো বিখ্যাত জাদুকরের কথা বলছি না। এই জাদুকরের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি হাতের তালুতে আগুন জ্বালানোর মতো ভেল্কিবাজিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। ছিলেন না কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাঁর ভক্তদের সাথে ভেল্কিবাজি করার। পি,সি সরকার, জুয়েল আইচের জাদুবিদ্যা মানুষকে ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খাওয়ায়। সকলেই জানে যে, তাদের পারফরমেন্সের পুরোটাই কৌশলের উপর নির্ভরশীল। কৌশলের বাইরে একটুও শেখার নেই, নেই ভাবারও। আমি যে জাদুকরের কথা বলছি তিনি ছিলেন অক্ষরের জাদুকর। ‘অক্ষর’ দিয়েও যে জাদু দেখানো যায়, বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবেও মারা যায়! এটা তাকে না দেখলে, তার শিল্পকর্মের সান্নিধ্যে না আসলে হয়তো উপলব্ধিই করা যেত না। অক্ষর থেকে শব্দ। শব্দ থেকে শব্দের সমাহার। তারপর শুরু জাদুকরের জাদুর প্রতিটি ধাপ। টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্তের। ‘কথার জাদুকর’ হিসেবে তার উপাধিটাও বেশ মজার। অন্য কারো না, আমি যে হুমায়ূন আহমেদ নামের একজন অসাধারণ লেখক, মানুষ ও চলচ্চিত্রকার সম্পর্কে লিখছি এতে কি কারো সন্দেহ আছে? তাঁর সম্পর্কে তো এতো এতো বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। তাহলে কেন কষ্ট করে তাঁর সম্পর্কে ‘অযথা’ অক্ষর, শব্দের অপচয় করবো। এর দরকার’ই বা কতটুকু?
১৯৯৯ সালের ঘটনা ২০১৫ পর্যন্ত মনে থাকাটা কতটুকু বিস্ময়ের জানিনা। তবে আপনার সম্মোহনী পারফরমেন্স আমার স্মৃতিবিভ্রমের পূর্ব পর্যন্ত যে মনে থাকবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ভালো থাকবেন প্রিয় বিস্ময় ব্যক্তিত্ব। শুভ কামনা আপনার জন্য।