বরিশালকে শিশুবান্ধব নগরী প্রকল্প ঘোষণার ৩ বছরেও বাস্তবায়ন নেই !
সোহানুর রহমান : বরিশাল হবে দক্ষিন এশিয়ার প্রথম শিশু বান্ধব নগরী। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের এমন ঘোষণার সাড়ে ৩ বছর পর হয়ে গেলেও এটি বাস্তবায়নের ছাপ পড়ছেনা নগরীতে। নানাবিধ জটিলতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে শিশুবান্ধব নগরী বরিশালের পথচলা। শিশু বান্ধব নগরী ঘোষনা বাস্তবায়ন হবে নাকি শুধুই কথার ফুলঝুড়ি এ নিয়ে শংকিত খোদ এ অঞ্চলের শিশুরাই। শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে গঠিত কমিটিগুলোও রয়ে গেছে অকার্যকর। বিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব ডাঃ কাজী আলিমউল্লাহ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষপটের কারণে একটু ধীরগতিতে কাজ চলছে। তবে স্কুল পর্যায়ের অনেক কাজ ইতোমধ্যে করা হয়েছে।বরিশাল সিটি করপোরেশনের ঘোষণার সাড়ে ৩ বছর পাড় হলেও আজও শিশুবান্ধব নগরীর সুফল পাচ্ছেনা এ অঞ্চলের শিশুরা। অহরহ ঘটছে শিশু নির্যাতন। শিশু অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কমছেনা বাল্য বিবাহ। দারিদ্রতার কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিতরা এখনো জরিয়ে পড়ছে বিভিন্ন ঝুকিপুর্ন কাজের সাথে। বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মোট জনসংখ্যার ৩৬ ভাগের বেশি শিশু। এসব শিশুদের উন্নয়ন, বিকাশ, সুরক্ষা, বিনোদন ও অধিকার নিশ্চিত করতে শিশুদের দাবীর প্রক্ষিতেই ২০১০ সালে বরিশাল সিটিকে শিশু বান্ধব নগরীর ঘোষনা করেন তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন। এ ঘোষনার কারণে তখন তিনি বহু প্রশংসা কুড়ালেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেননি বলে জানিয়েছে বিসিসি’র একাধিক সূত্র। শিশু বান্ধব নগরীর গড়ার জন্য ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়। তবে এর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি বিসিসি কর্তৃপক্ষ। ওই অর্থবছরেরই শিশুপার্ক নির্মান প্রকল্পের জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেটে রাখা হয়। একই ভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরেরও একই পকল্পের জন্য একই টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারনে প্রতি অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্ধ রাখা হলেও সমন্বয় করে কাজ গুলো করা হচ্ছে না। শিশু সংগঠক তাহসীন উদ্দীন জানান, আসুন গড়ি শিশু বান্ধব বরিশাল নগরী গড়ার জন্য ৪টি বস্তি (বঙ্গবন্ধু কলোনী, শিশু পার্ক কলোনী, স্টেডিয়াম কলোনী, পলাশপুর কলোনী) শিশুরা পরিদর্শন করে নগরীর শিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে শিশুদের প্রধান সমস্যাগুলো তুলে এনে গত সিটি নির্বাচনের সময় মেয়র প্রার্থীদের শিশুদের মুখোমুখি করা হয়। এরপর গবেষনা করে সংশ্লিষ্টদের সাথে মত বিনিময় করে চূড়ান্ত দাবী প্রস্তুত করে হয়েছে। দাবীগুলো হচ্ছে নগর শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগ ও তার কার্যালয়, শিশুদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও কার্যক্রম গ্রহন, নগর শিশু কাউন্সিল গঠন, শিশু হেল্প লাইন চালু, উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশু স্বার্থ নিশ্চিত করন, সৃজনশীলতা বিকাশে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহন, সমন্বয় কমিটি গঠন ও সমন্বয় সাধন। তাহসীন বলেন, এ দাবী গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের কাংক্ষিত নগরী গড়া সম্ভব। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান এএইচ তৌফিক আহমেদ জানান, প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তি কম হওয়ায় সবাই শিশু বান্ধব নগরী নিয়ে হতাশ হলেও উদ্যোগটি অনেক দূর গুছিয়ে আনা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন বস্তির স্কুল গুলোতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যায়ে লেট্রিন নির্মান করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে গতি হারিয়েছে। তিনি জানান, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে তেমন আগাতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ও আলাদা দপ্তর থাকা দরকার। যে দপ্তর শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এ দপ্তর না থাকায় প্রতি বাজেটে বরাদ্ধ রাখলেও কাজ করা যায়নি। বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, শিশু বান্ধব নগরীর কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে। তবে নগর শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগের শিশুদের দাবীকে অযৌক্তিক দাবী করেন তিনি। এব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে একটি শিশু বান্ধব নগরী গড়তে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে নগরীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিশুপার্কটিও তার আমলে নির্মিত বলে জানান তিনি। তবে সদ্য বিদায়ী মেয়র হিরন তার মালিকানাধীন শিশুপার্কটির প্রবেশ ফি ৮ টাকা থেকে ২০ টাকায় উন্নীত করেছেন বলে তিনি জানান। শিশু সংগঠক সেভ দ্যা কোষ্টাল পিপলের নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু জানান, শিশু বান্ধব নগরী ঘোষনার কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখন মুখ থুবরে পড়েছে। রাজনৈতিক বিচারে নয়, শিশুদের সার্থে বতমান মেয়র কাজ করলেই এ নগরী গড়া সম্ভব বলে তিনি জানান।