Posts

উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না শিশু শ্রমিকরা

 জাওয়াদুল করিম জীসান: সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ ১২ ঘন্টা পরিশ্রম করেও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় না বগুড়ার প্রেস পট্টির শিশু প্রেস শ্রমিকরা।বড়দের মত একই পরিশ্রম অথবা কখনো অধিক পরিশ্রম করেও শিশু শ্রমিকরা পায় না সম পরিমান পারিশ্রামিক।

সরেজমিনে ঘুরে বেশ কিছু শিশু শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের শাপলা মার্কেট ও প্রেস পট্টির শিশু প্রেস শ্রমিক প্রায় দু’শো।এদের অধিকাংশের বয়স ১২-১৬ বছর।এরা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সপ্তাহে মাত্র ৭০টাকা,মাসে ২৫০ টাকায় শ্রম দেয়।অথচ একই পরিশ্রম ও সময়দানকারী বড় শ্রমিকরা পায় এদের তুলনায় ৫-৭ গুন পারিশ্রমিক।ফলে উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে অমানবিক ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিশু শ্রমিকরা।

সুদূর গাইবান্ধা থেকে এসে কাজ করা শিশু শ্রমিক রনি(১২)জানায় তার সাপ্তাহিক বেতন ৭০ টাকা।এক কাগজের দোকানে কাজ করে সে।একই দোকানে একই কাজের বড় এক শ্রমিকের মাসিক বেতন ২,৫০০ টাকা।শুধুমাত্র ছোট বা শিশু হবার কারনে তাকে এত অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন মহাজন।অথচ তাকে কাজ করতে হয় তুলনামুলক বেশি।

শাপলা মার্কেটের  শিশু শ্রমিক মিলন(১১) জানায় প্রতিদিন সকালে এসেই মেশিন ও ঘর পরিষ্কার,সারা দিন মেশিন চালকের সহযোগি হয়ে কাজ,দুপুরের রোদে প্রেস পট্টি থেকে চারমাথা এলাকার মহাজনের বাড়ীতে গিয়ে খাবার আনা সহ সার্বক্ষণিক ব্যস্ত এ শিশুটির মাসিক বেতন মাত্র ৩৫০ টাকা।অথচ অন্যান্য বড় শ্রমিকদের মাসিক বেতন ২০০০/৩০০০টাকা।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেস শ্রমিকের কাছে জানা যায় ছোট শিশু শান্ত ও অল্পেই তুষ্ট থাকায় শিশু শ্রমিকরা এর কোন প্রতিবাদ করেনা।ফলে এমন অসম পারিশ্রমিক ব্যবস্থা থেকেই যাচ্ছে।“এত অল্প টাকায় কেন কাজ কর বা অন্যান্যদের মত বেশি টাকা দাবি করোনা কেন?”এমন প্রশ্নের উত্তরে শিশু শ্রমিক মাসুদ(১৩) জানায়,“বেশি চাইলেই মহাজন ক্ষেইপা যাবি,কাজেত্থেকা বাদ দিবি বলে ভয় দেখায়।মহাজন কয়,না পোষালে চলে যা।কিন্তু কাজ তো করা লাগবিই,তাই করি।” শাপলা মার্কেটের  এই শিশু শ্রমিক আরও জানায়,বেশি কাজ থাকলে রাতে অভারটাইম কাজ হয়।কখনও রাত ১-২টা পর্যন্ত মেশিন চলে।কিন্তু অতিরিক্ত কাজ করলে বড় শ্রমিকদের বেশি টাকা দেয়া হলেও তারা পায় না।মহাজনকে বললে কাজে ভুল করা,কাজ না করা,এক দিন না আসা,দেরিতে আসা,ছোটখাটো ক্ষতি সহ নানান দোহাই দিয়ে পার করে দেয়।তাই পরবর্তীতে আর কোনদিন চাওয়ার সাহস পাওয়া যায় না।

এদিকে ১৮ বছরের কম বয়সী হওয়ার কারনে প্রেসপট্টি শ্রমিক সমিতির সদস্য না হওয়ায় এরা কোন দাবি ,প্রতিবাদ বা চাহিদা জানাতে পারে না।ফলে সমপরিমাণ পারিশ্রমিক পায় না।আর বড় শ্রমিকরাও অসচেতন থাকায় এদের জন্যে কোন দাবিও ওঠে না।তৈরি হয় না কোন নীতি নির্ধারনী।অপর দিকে শ্রমিক সংগঠনের সদস্য হওয়া শ্রমিকরা আহত বা অসুস্থ হওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনে সমিতি থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলেও এরা তা থেকেও বঞ্চিত।অথচ তুলনামুলকভাবে শিশু শ্রমিকরাই বেশি অসুস্থ বা আহত হয়ে থাকে।এত কম পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কথা বললে বেশ ক’জন বড় শ্রমিক জানায়,“ছোটদের বেতন বাড়ানো তো দূরের কথা ,বেশির ভাগ মালিকই শিশু শ্রমিক নিতেই বেশি আগ্রহী হয় কম বেতন দেওয়ার জন্যে।তারা দেখেনা সে কতটুকু পরিশ্রম করল,দেখে তাদের বয়স।”

প্রেস শ্রমিক সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতিকে শ্রমিকদের এমন বৈষম্যের কথা জানালে তিনি তা স্বীকার করে বলেন,সত্যিই শিশু শ্রমিকরা বড়দের সমান অথবা কখনও বেশি পরিশ্রম ও সময় দেয়,কিন্তু মহাজনরা তাদের উপযুক্ত টাকা দেয় না।আর সমিতির সদস্য না হওয়ার কারণে তাদের অধিকারের ব্যাপারেও কেউ কোন মুখ খুলেনা।তাদের মজুরি সমান হওয়া উচিত।তিনি আরও জানান,শিশু শ্রমিকদের এ ব্যাপারে অচিরেই তারা ব্যবস্থা নেবেন এবং শিশু শ্রমিকদেরও সমিতির সদস্য পদ দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়,শ্রমিক সমিতির নিবন্ধনকৃত সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫’শ।সকল বিভাগ মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১৫০০ জন।এর মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি।এই শিশু শ্রমিকরা কি তাহলে পাবে না তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক?

শসা বিক্রি করে কেমনে ইজ্ঞিনিয়ার হমু….!!

মুসাব্বির হোসেন(কুষ্টিয়া): গরীব বা ধনী হোক সবারই স্বপ্ন আছে । স্বপ্ন কখনো জাতি ভেদে হয় না । আর সবারই স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে । যে বয়সে লেখা পড়ার কথা ঠিক সে বয়সে আমাদের দেশে অনেক শিশুই তার পরিবারের জন্য জিবীকা নির্বাহ করার জন্য বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত হয় ।

শ্রম যে রকমই হোক তারা চাই দুবেলা খেয়ে বাঁচতে । এইতো এনসিটিএফ এর খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে আইসিটি এন্ড ডকুমেন্টেশন ট্রেনিং থেকে ফেরার পথে ট্রেনে এই ধরনের এক শিশুর সাথে কথা হয় । দূর থেকে শোনা যায় “খিরা লইবেন খিরা” । শিশুটির নাম নাজমুল (১০) । খুলানার দৌলতপুরে রেলিগেট এলাকায় থাকে ।

নাজমুলকে স্কুলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলে সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে । তার কাছ থেকে খিরা বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বলে স্কুলে যামু কি দিয়া । যাইতে অটো ভাড়া লাগে তাই এই ব্যাবসা করি । প্রতিদিন আমার এই খিরা বেইচা লাভ হয় ১৫০-২৫০ টাকার মত । এই লাভের টাকা দিয়ে  শিশুটি করে জানতে চাইলে বলে লাভের টাকা দিয়া স্কুলে যাই আর “মা”রে বাকি টাকা দিই । আর ঐ টাকা দিয়ে মা ঈদে জামা কপড় কিন্না দেয় ।

বড় হয়ে নাজমুল কি হতে চায় নাজমুলের কাছে জানতে চাইলে “আমি ইজ্ঞিনিয়ার হমু । গাড়ি বানামু” কিন্তু শসা বিক্রি করে কি ইজ্ঞিনিয়ার হওয়া যায় ? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয় তোমাকে যদি কেউ লেখা পড়ার খরচ দেয় তাহলে কি তুমি পড়বে ? প্রতি উত্তরে শিশুটি বলে “কে দেবে আমার লেখা পড়ার খরচ” ।

আমাদের দেশে আমাদের সমাজে অনেক শিশুই আছে যারা লেখা পড়া করতে চায় দেখে অনেক বড় বড় স্বপ্ন কিন্তু আর্থিক অভাবেই ঐসব ইচ্ছা ঐসব স্বপ্ন স্বপ্নই থেকেই যায় ।