সম্প্রতি সু্ইডেনের একটি গবেষনা থেকে বেড়িয়ে এসেছে যে, তরুণেরা যারা মোবাইলফোন ব্যবহার করে এবং যাদের বয়স ২০ বছরের কম, অন্যদের তুলনায় তাদের প্রায় ৫ গুন বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্রেন ক্যানসারের৷ অন্যআরেকটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে একটি দুই মিনিট স্থায়ী মোবাইল কল শিশুদের মসত্মিস্কে হাইপার এ্যাকটিভিটি সৃষ্টি করে যা কিনা পরবর্তি এক ঘন্টা পর্যনত্ম তাদের মস্তিষ্কে বিরাজ করে৷ ইউরোপিয়ান জার্নাল অব অনকোলজির এক রিপোর্টে কর্ডলেস ফোন ব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কর্ডলেস ফোন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ৰতিকর রেডিয়েশন ছড়ায় যার ফলে ব্যবহারকারীর হার্ট এ্যাটাক্ট এর সম্ভাবনা বেড়ে যায় দ্বিগুন , ব্যবহারকারীর স্নায়ূ দূর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায়, দেহ ধীরে ধীরে ক্লানত্ম এবং নিসত্মেজ হয়ে পড়ে এমনকি নিয়মিত ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটায়৷ শিশুদের জন্য যে কারনে ঝুঁকিপূর্ণ: ৰতিকর রেডিয়েশন প্রাপ্ত বয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য ৰতিকর, শিশুদের জন্য তা আরো বেশি মারাত্নক ৰতিকর যা কিনা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যহত করে৷সারা পৃথিবীতেই এখন শিশুরা প্রায় বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করে থাকে৷ এ প্রসঙ্গে সানি’স স্কুল অব পাবলিক হেলথ্ এর ডিন ডেভিড কার্পেন্টার বলেছেন যে ” শিঘ্রই আমরা হয়তো একটি মহামারী রোগের শিকার হতে পারি এবং সেটি হবে মসত্মিস্ক ক্যানসার৷ গবেষনা থেকে আরো বেড়িয়ে এসেছে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার শিশুদের শ্রবণ ক্ষমতাও হ্রাস করে দেয়৷ রেডিয়েশন গবেষক কেরি ক্রফটন বলেছেন যে ” তবে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই এখন ১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিরম্নত্সাহিত করা হচ্ছে, যা কিনা অন্যদের জন্য একটি ভালো নিদর্শন”৷ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়ঃ ডাক্তার কার্পেন্টার বিশ্বাস করেন যে শিশুদের প্রায় ৩০ ভাগ ক্যানসারই হয়ে থাকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কর এই রেডিয়েশনের কারনে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষনায় তার প্রমানও মিলেছে৷ গবেষনা থেকে আরো বেড়িয়ে এসেছে যে শিশুরা যারা ম্যাগনেটিক (চুম্বক) ফিল্ডস এর কাছাকাছি অবস্থান করে ক্রমেই তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং যারা পাওয়ার লাইনের ( যা কিনা ইএমএফ উত্পন্ন করে) কাছাকাছি অবস্থান করে, এটা খুবই পরিষ্কার যে তারা লিওকেমিয়ায় (একটি রোগ) আক্রান্ত হয়ে পড়ে৷ এমনকি যারা মোবাইল অথবা রেডিও টাওয়ারের ১২০০ ফিট এর মধ্যে বসবাস করে তাদের মসত্মিস্কে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অধিক৷ আর বেশিরভাগ ৰেত্রেই টাওয়ারগুলো গড়ে উঠছে স্কুলের ছাদে, বাড়ির ছাদে এবং শপিংমলের উপরে৷ যেসকল স্থান গুলোতে হরহামেশাই আমরা যাতায়াত করে থাকি৷ অভিভাবকদের যে বিষয়গুলো জানা জরুরীঃ বর্তমানে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে অভিভাবকদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরির অন্যতম কারন হচ্ছে তারা জরম্নরী প্রয়োজনে সহজেই সনত্মানদের খোঁজ নিতে পারে৷ প্রকৃতপক্ষে একটি আদর্শ দেশে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহরের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কি? মনে রাখা জরম্নরী যে শিশুরা শিশুই, তারা কখনোই বড়দের মতো শারীরিক সক্ষমতার অধিকারী নয়৷ তাই একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার পরিবারে শিশু বান্ধব কিছু নিয়মনীতি আপনাকেই তৈরি করতে হবে৷ আপনি কি আপনার শিশুর মাথাটাকে একটি ওভেনের মধ্যে রাখতে চান? নিশ্চই না৷ কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে আপনার অজান্তেই আপনার শিশুর মাথাটি ওভেনে রেখে দেয়ার মতোই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মোবাইল ফোন থেকে ক্রমাগতভাবে নির্গত রেডিয়েশন দ্বারা৷ রেডিয়েশনের ভেতরে যে ইলেকট্রমেগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ) রয়েছে তা সহজেই শিশুর মস্তিষ্কে ঢুকে পড়তে সৰম৷ আর এই ইলেকট্রমেগনেটিক ফিল্ড বা সংৰেপে ইএমএফ শিশুর মসত্মিস্কে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, যা কিনা শিশুদেরর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর৷ শুধুমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারনেই না, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক গেইম, বৈদ্যুতিক পাওয়ার লাইন এবং ওয়াই ফাই ব্যবহারও শিশুদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে৷ স্কুলে বৈদ্যুতিক দূষনের প্রভাব পড়ছে শ্রেনীকৰ শিশুটির পড়াশোনার উপরে৷ টরেন্টো স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ লার্নিং ডিসাবেলিটিস স্কুলে ইএমএফ হ্রাস করার জন্য ইএমএফ ফিল্টার স্থাপন করে, গোপনে এক গবেষনা করে দেখা গিয়েছে যে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যমী এবং সতেজ৷ এ প্রসঙ্গে গবেষক মাগদা হাবাস পিএইচডি জানান ” প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে আমি একটা ভুল করেছিলাম৷ আমি ধরে নিয়েছিলাম যে ইএমএফ ফিল্টার স্থাপনে এ অবস্থার উন্নতি হবে সর্বোচ্চ ৩-৫ ভাগ৷ কিন্তু পরবর্তীতে আমি ফলাফল দেখে চমকে উঠি যা ছিলো প্রায় ৫৫ ভাগ! এমনকি যারা এই ফিল্টার স্থাপনের পূর্বে এর বিরোধিতা করেছিলো তারাও পরে ভালো বোধ করছে বলে জানিয়েছে৷ সম্প্রতি সিকাগোর একটি শহরে এবং ইংল্যান্ডে অভিভাবক এবং সংশিস্নষ্ট অন্যরা এমনকি শিক্ষকেরা স্কুলে রেডিয়েশন ছড়ায় এমন যন্ত্র ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ তারা মনে করে এর ফলে তাদের শিৰার্থীদের নিওরোলোজিকাল সমস্যা হতে পারে৷ কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে ঝুঁকির পরিমান কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারেঃ মোবাইল/ কর্ডলেস ফোনের স্পিকার অন করে কথা বলা, শিশুদেরকেও এমনটি করতে উত্সাহিত করা৷ মোবাইলে কথা বলার চেয়ে টেঙ্ট/এসএমএস এর মাধ্যমে যোগাযোগ বেশি করা৷ শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজনেই আপনার শিশুকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিন অবশ্যই এবং তার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে ৷ রাতে ঘুমাবার সময় মোবাইলের মনিটর আপনার ঘুমান্ত শিশুর কাছ থেকে অন্তত ৬ ফিট দূরত্বে রাখুন৷ আপনার রান্নাঘরে যদি মাইক্রো ওভেন থেকে থাকে তাহলে শিশুদের কে রান্নার সময়/ওভেন ব্যবহারের সময় দূরে রাখুন৷এমনকি ইস্ত্রি ব্যবহারের সময়ও শিশুদেরকে দূরে রাখুন৷ কারন ওভেন এবং ইস্ত্রি উভয় থেকেই ব্যবহারের সময় ইএমএফ নির্গত হতে থাকে যা কিনা বড়দের চেয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অধিক ৰতিকর৷ গর্ভবতী মায়েদেরেকে অবশ্যই মোবাইল / কর্ডলেস ফোন ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে, তার গর্ভের শিশুটির সঠিক ভাবে বেড়ে ওাঠার প্রয়োজনেই৷ গবেষনা প্রমান করেছে যে মাত্রারিক্তি বৈদ্যুতিক দূষনের ফলে আপনার গর্ভে থাকা সনত্মানটি বিকলঙ্গ হতে পারে এমনকি তার শ্রবন শক্তিও ব্যহত হতে পারে এবং শিশুর নার্ভ সিস্টেম গ্রোয়িংএ বাধা সৃস্টি করতে পারে সেই সাথে এটি মিস ক্যারেজ ও সনত্মান প্রসবের অসুবিধা হওয়ার মতো ভয়াবহ সব সম্ভাবনাকেও ডেকে আনতে সৰম৷ গবেষনায় এও প্রমানিত হয়েছে যে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যনত্ম তাদের উপরে গর্ভাবস্থায়ী মায়ের মোবাইল/কর্ডলেস ফোন ব্যবহারের প্রভাব থেকে যায়৷ নিজেকে এবং শিশুকে অদৃশ্য তবে স্বাস্থ্যের জন্য ৰতিকর ইএমএফ থেকে রৰা করতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারেঃ দিনের শুরুতেই এক কাপ বুস্ন বেরী খেতে পারেন, যা কিনা আপনার দিনকে চমত্কারভাবে শুরু করতে সহায়ক হবে৷ নিয়ম করে মাঝে মাঝে শুকনো বড়ই খেতে পারেন৷ শুকনো বড়ই এ ইউনিক এন্টি অঙ্ডি্যান্ট থাকে, যা কিনা বৈদ্যুতিক দূষনের ফলে নির্গত স্বাস্থ্যের জন্য ৰতিকর রেডিয়েশনের বিরম্নদ্ধে লড়াই করে৷ প্রতিদিন ৪-৫ টি বাদাম খাওয়া যেতে পারে৷ খাবারে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান আলুবোখারা যোগ করা যেতে পারে৷ বাঁধা কপি এবং ফুল কপি খেতে পারেন৷ যা কিনা আপনার দেহকে রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহায্য করবে৷ নিয়মিত ২ চামচ মধু খেতে পারেন৷ সপ্তাহে ৩-৪ দিন নিয়ম করে প্রতিদিন একবার ঘোল খেতে পারেন৷ তহলে আজ থেকেই শুরম্ন হোক আপনার শিশুকে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে সুরৰার কাজটি৷ যার ফলে নিশ্চিত্ হবে তার সুস্বাস্থ্যবান আগামী৷
–(ইন্টারনেট অবলম্বনে) ইসতিয়াক আহমেদ শাওন