Children got access to share information widely

On December 2015 , National Children’s Task force discussed the child rights situation with the local government in a public hearing session. Children raised their voice subject to child marriage, Child violence and use of mobile in class room . In reply Md Abdur Razzak, the Union Chairmen told that he will take necessary steps to overcome these problem and requested all the teachers to abundant the use mobile phone during class time. He also added that from next year NCTF member will participate in local budget session. And to stop child marriage he initiated a hot line as well as he allotted a room in his Union office for the children. Most importantly NCTF got access in Union Web Portal to share their news for all.


শিশুদের পাশে থাকতে চাই

হাসিবঃ ধানখোলা ইউনিয়নের মধ্যে যে কোন গ্রামে শিশু বিবাহের খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমাকে জানাবে আমি ব্যবস্থা নিব। শিশুদের জন্য হট লাইন চালু করলাম ০১৮১১৯৫৫৭৫৮। এনসিটিএফ এর উদ্যেগে ০৩রা নভেম্ববর ২০১৫ ইং ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত শিশু অধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক গণ-শুনানিতে ধানখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক শিশুদের শিশু বিবাহ বিষয় উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে এ ঘোষনা দেন।

উক্ত অনষ্ঠানে্ এনসিটিএফ শিশুদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধান অতিথি জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন আজকে এনসিটিএফ এর সদস্যদের উপস্থাপনা শুনে আমি মুদ্ধ,অভিভূত,উল্লাসিত যে আমার ইউনিয়নের শিশুরা এত সুন্দর করে তাদের দাবি,চাওয়া পাওয়া তুলে ধরতে পারে ধন্যবাদ এনসিটিএফ সহ সেভ দ্য চিলড্রেন,পলাশি পাড়া সমাজ কল্যান সমিতিকে। তোমাদের দাবির মধ্যে গুরুত্বপূর্র্ণ হল শিশু বিবাহ রোধ, ক্লাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেনীকক্ষ কম, তোমাদের জন্য একটি রুম বরাদ্ধ।IMG_0925_2

আমার ইউনিয়নে শিশু বিবাহের হার আমার মাধ্যমে শূন্যতে নামিয়ে এনেছি ইউনয়ন পরিষদ থেকে কাউকে বয়স বাড়িয়ে জন্ম সনদ দেওয়া হয় না। এটা অব্যাহত থাকবে, কিন্তু তার পর প্রশ্ন হল কিভাবে হয়,গ্রামের কিছু অসচেতন মানুষ আছে যারা গোপনে রাতের আধারে অন্য গ্রামে নিয়ে বিবাহ দেওয়া। আমি তোমাদের যে ফোন নাম্বার দিলাম যে কোন গ্রাম থেকে শুধু তোমরা আমাকে একটা ফোন দিবে বাকি কাজ আমার। স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন দয়া করে ক্লাস চলাকালিন সময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলবেন না। ধানখোলা ইউনিয়নের যে স্কুলগুলোতে ক্লাসরুম কম আছে তোমরা আমাকে লিখিত দাও আমি উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মিটিংএ উত্থাপন করব। এনসিটিএফ এর দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করার জন্য একটি রুম বরাদ্ধ দিলাম। এনসিটিএফ্েরে যে কোন সংবাদ আমাদের ইউপি ওয়েব সাইডে দেওয়া হবে। তিনি ইউপি সচিবকে বলেন আপনি আগামী সাতদিনের মধ্যে রেজুলেশন রুম এনসিটিএফকে বুঝিয়ে দিবেন। আগামী ইউপি বাজেটে অবশ্যই শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট রাখবো। এনসিটিএফ এর পাশে আমি সব সময় থাকবো তোমরা যে কোন ব্যপারে আমাকে জানালে আমি তোমাদের সহযোগিতা করব। ‍শিশু গবেষক আখির সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন পিএসকেএস এর মৃদুল সরকার,সেভ দ্য চিলড্রেন প্রতিনিধি শান্ত মোঃ শহিদুল ইসলাম, পিএসকেএস এফ এফ রাবেয়া খাতুন উপজেলা ভলান্টিয়ার তানিয়া পারভীন মুক্তা। উক্ত অনষ্ঠানে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার,স্কুল শিক্ষক,সিএফএল দল,এডি সেন্টার,সিপি সদস্য, এনসিটিএফ সদস্যসহ ৫০ জন অংশগ্রহনকারী উপস্থিত ছিলেন

এনসিটিএফ নীলফামারী’র নভেম্বর মাসের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

এ.টি.এম.ফয়সাল রাব্বি রাকিব: গত ২ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে এনসিটিএফ নীলফামারী’র নভেম্বর মাসের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মোজাহিদুল হাসান । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ রাকিব, সাদ, মেরাজ, রোদেলা, সুরভী, উৎসব, অর্থী,জেলা ভলেন্টিয়ার রোজী এবং সিওয়াইভি কেশব রায়।

উক্ত সভায়, নীলফামারী এনসিটিএফ এর খবরপত্র ‘কচি হাতের সৃস্টি’ -২০১৫ সংখ্যা প্রকাশ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আগামী ২০ নভেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ‘কচি হাতের সৃস্টি’তে লেখা প্রকাশের জন্য লেখা জমা নেওয়া হবে, এমনটা সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিশু অধিকার বাস্তবায়নে পাশে থাকব

মুনিরাঃ এনসিটিএফ এর উদ্যেগে ২ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১ ঘটিকার সময় মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,মেম্বার স্কুল প্রধান শিক্ষকদের সাথে এনসিটিএফ সদস্যদের শিশু অধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক গণ-শুনানি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন এর সব গ্রাম থেকে এনসিটিএফ সদস্য সহ ইমাম, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।

IMG_20151102_121858

শিশু অধিকার সনদের ১২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শিশুরা তাদের চাওয়া পাওয়া নিয়ে দায়িত্ব বাহকের সাথে মতপ্রকাশ করতে পারবে। গণ-শুনানিতে শিশুদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলো হচ্ছে ইভটিজিং,শিশুদের মাদকের প্রতি আসক্ততা,অল্প বয়সে বিবাহ, কিছু স্কুলে বাথরুম ব্যবহার অনপুযোগী, ইউনিয়ন পরিষদে এনসিটিএফ মিটিং রুম,বিশুদ্ধ পানির অভাব। এনসিটিএফ শিশুদের গত জানুয়ারী থেকে সেপ্টেমবর এর মধ্যে শিশু বিবাহের সংখ্যা ১৫ জন যাদের বয়স গড়ে ১০-১৪ বছর। তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নাজমুল হুদা বিশ্বাস এর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত গণশুনানীতে ৬নং ওয়ার্ডেরে ইউপি সদস্য বলেন শিশু বিবাহ বন্ধ করতে হলে সবার আগে অভিবাবকদের সচেতন করতে হবে। তাদের সচেতন করতে পারলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে এবং আমাদের এলাকায় কোন জন্মসনদ পরিবর্তন হয়না। চেয়ারম্যান মহোদয় এক্ষেত্রে অনেক বেশী সজাগ। আমার এলাকার মধ্যে কোন মেয়ে ইভটিজিং স্বীকার হও আমাকে জানালে আমি পদক্ষেপ নিব।

তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অত্র অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, শিশু বিবাহ সর্ম্পকে বলেন বাল্য বিবাহ গোপনে হয়ে থাকলেও আমরা এক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা পালন করি। জন্মসনদ জাল করার কারণেও আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। তোমরা সবাই যদি নিজ নিজ এলাকা থেকে সজাগ থাকো তবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্ভব। তোমাদের এলাকার বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত তথ্য দিলে আমরা সেটি বন্ধ ‍করতে পারব। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত তাই এদের রক্ষা করতে হবে। আমরা তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের হার আগামী বছরের মধ্যে ১০০% এর মধ্যে ২০% আনবো । এনসিটিএফ থেকে তোমরা যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছো সেগুলোর সাথে আমি একমত এগুলো প্রতিরোধ করতে আমার যেখানে যা সহযোগীতা লাগবে আমাকে বললে আমি সহযোগিতা করব।

এছাড়া শিশুদের উত্থাপিত বিষয় থেকে চেয়ারম্যান মহোদয় ভরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে সহযোগিতা করবেন বলে শিশুদের বলেন। এছাড়া ভরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়না জানালে চেয়ারম্যান মহোদয় বলেন আমি আজকের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করবো। এছাড়া এনসিটিএফ এর অন্য এক শিশু তার এলাকার রাস্তার সমস্যা উত্থাপন করলে চেয়ারম্যান মহোদয় বলেন আগামী ডিসেম্বর এর মধ্যে তোমাদের এলাকার রাস্তার সমস্যা সমাধান হবে। এছাড়া শিশুদের অন্যান্য সমস্যা ও প্রস্তাবের পক্ষে তিনি একমত হন। আরো বলেন তোমাদের খবরগুলো আমাদের ইউনিয়ন র্পোটালে দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যেক্তাকে দিলে তা প্রকাশ করা হবে এবং এমন সমস্যা আমার কাছে তুরে ধরলে আমরা সমাধান করতে পারি। পলাশি পাড়া সমাজ কল্যান সমিতি ও সেভ দ্য চিলড্রেন সহযোগিতায় উক্ত শুনানিতে শিশু ও সুশীল সমাজের ৪৮ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এনসিটিএফ সদস্য আব্দুস সালাম এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন পিএসকেএস প্রতিনিধি আব্দুল ওহাব, রবি সহ সেভ দ্য চিলড্রেন প্রতিনিধি শান্ত মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ আসাদুজ্জামান, উপজেলা ভলান্টিয়ার জসিম এবং ইসমোতারা প্রমুখ্।

নীরবে চাপা পড়ছে আরো একটি স্বপ্ন

তনিমা রব তোড়া : ইয়াসিন নামের ছেলেটি। বয়স ১৩ কি ১৪। তাকে প্রতিদিন পাড়ার সামনের  মুদির দোকানটিতে দেখা যায়। ইয়াসিন মুদির দোকানে কাজ করে।  সাধারণত এই বয়সের  শ্রমজীবী শিশুরা যেমন চঞ্চল আর দুষ্ট প্রকৃতির হয় ইয়াসিন মোটেই তাদের দলের নয়। শান্ত আর ভদ্র সে ছেলেটি বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে হাজারও কষ্ট। সারাদিন দোকানে থাকে আর দোকানের সব কাজ করে। স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে  জানতে চাইলে সে বলে, – ” আগে স্কুলে যাইতাম। এখন আর যাইতে পারি না। সারাদিন দোকানেই থাকন লাগে, ইচ্ছা আছিল পড়ালেখা করমু কিন্তুু বাবায় এইহানে পাঠায় দিসে ”। বেতনের কথা জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, যে টাকা বেতন পায় সেটা বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় আর এখানে থাকা খাওয়া সব মালিকে দেয়। দোকানে কাজ করে পড়াশুনা করা অসম্ভব তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে  আগেই। ইয়াসিনের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে চাকুরী করবে। কিন্তু দারিদ্রতার  কাছে হার মেনে চাপা পড়ে যাচ্ছে আরও  একটি স্বপ্ন

নীলফামারীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেশবের অসাধ্য সাধন

আঠারো বছর বয়সের দুর্দান্ত সাহসের কথা বলেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। সে কথা প্রমাণ করতেই যেন অসাধ্য সাধন করেছে নীলফামারীর আঠারো বছর বয়সী কিশোর কেশব রায়। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই সাফল্যকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ কেশব রায়।

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশন’-ভূষিত হয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্যাকুড়ী গ্রামের কেশব রায়। প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবী এই কিশোর নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদেরও করেছেন স্কুলমুখী। জলঢাকার শিশু ফোরামের সভাপতি কেশব রায় এলাকায় সফল শিশু সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সাল থেকে তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সার্বিক স্যানিটেশন, গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা এবং চলতি বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত শিশু সমাবেশে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এছাড়া তিনি অবদান রেখেছেন বাল্যবিবাহ বন্ধে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক কাজ করে আসছেন। অভিনয়, গান ও নাটকের মাধ্যমে তিনি মানুষকে সচেতন করার কাজটি করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ কারেজ অ্যাওয়ার্ড ফর এডুকেশন’। গত ১২ জুলাই,২০১৩’তে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ ভবনে মালালা দিবসে বিশেষ কর্মসূচিতে তার এ পুরস্কার জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক দূত ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন তুলে দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ প্রতিনিধির হাতে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ওইদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দফতরে মালালার পাশাপাশি সম্মানিত করা হয় বিশ্বের নানা প্রান্তের আরও সাত শিশুকে। এই সাত শিশুর মধ্যে বাংলাদেশি কেশব রায় স্থান করে নিয়েছেন। সম্মাননা পাওয়া অন্য ছয় শিশুর মধ্যে ভারতের দুজন এবং নেপাল, পাকিস্তান, মরক্কো ও সিয়েরালিয়নের একজন করে রয়েছেন। কেশবের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ী গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তারা দুজনই এখন শিক্ষার্থী।বাবা দিনমজুরি এবং নিজের ভিটেসহ এক বিঘার মতো যে জমি আছে সেটুকুই তিনি চাষাবাদ করেন। সেখান থেকে জোগান দেন দুই সন্তানের পড়ার খরচ। মা গৃহিণী রঞ্জিতা রানী রায়। টাকা-পয়সার অভাবে দু-একবার কেশবের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য তিনি অন্যত্র কাজ নেন। সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর কেশবের বাবার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সে সময় কেশব লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে তার স্কুলের পাশে একটি ভাঙাড়ি দোকানে কাজ নেন। এতে তার মাসে আসে ৩০০ টাকা। কিন্তু কেশব পড়াশোনা ছেড়ে মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন। তার মন পড়ে থাকে স্কুলে। তার দোকানের পাশ দিয়ে যখন অন্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায় তখন তিনি আনমনা হয়ে পড়েন। ওই দোকানের কাজে তিনি আর মন বসাতে পারেন না।

কাজ ঠিকমতো না করায় একবার তার কিছু বেতনও কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর লেখাপড়া ছেড়ে বেশি দিন থাকতে পারেননি। আবার টাকা জোগাড় করে স্কুলে ভর্তি হন। এ জন্য তিনি মাঝেমধ্যে প্রাইভেটও পড়াতেন। আরও একবার স্বল্পসময়ের জন্য তার লেখাপড়ায় ছেদ পড়েছিল। এভাবেই অনেক চড়াই- উৎরাইয়ের পর কেশব এখন স্কুল গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা দিয়েছেন। তার ইচ্ছা লেখাপড়া শিখে মানবসমাজ উন্নয়নে কাজ করবেন। তার মতে, একজন  মানুষকে সচেতন করতে পারলে আর তার অভাব থাকবে না। তার মতো করে সে তার সমস্যা সমাধান করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

কেশব একে একে বেশ কয়েকজনের বাসায় গিয়ে ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলে ভর্তি করেন। বাড়ির পাশে রিকশাভ্যান চালক বাগান চন্দ্রের ছেলে প্রদেশ চন্দ্র ও দিনমজুর সুরিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে বিধান চন্দ্র রায়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ওই দুই ছাত্রের বাবা ও মাকে বুঝিয়ে পুনরায় স্কুলে ভর্তি করেন। তারা এখন একটি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। একইভাবে কেশব লেখাপড়ার ফাঁকে শিশু ফোরামের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ওই এলাকার এখন পর্যন্ত ২৫ শিশুর বাল্যবিবাহ বন্ধসহ অর্ধশত ঝরেপড়া শিশুকে স্কুলমুখী করে তুলেছেন। স্থানীয় সমস্যাভিত্তিক নাটক লিখে তা মঞ্চায়ন করছেন তিনি। উদ্দেশ্য, মানুষকে সচেতন করা।
বর্তমানে তিনি কাজ করছেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও ঝরেপড়া রোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, জন্মনিবন্ধন, গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা, গর্ভকালীন চেকআপ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবকরণে। সমাজ সচেতনতায় সাহসী ভূমিকা রাখা এবং নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের উদ্দেশে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন কেশব। তার গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে, নিজ এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলগামী করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায়। কেশবকে অনেকে উল্লেখ করেছেন ‘বিশ্বের যুবসমাজের নেতা’ ও ‘রোল মডেল’ হিসেবে। অথচ তার এগিয়ে আসার পথ সুগম ছিল না। প্রতিকূলতার মধ্যে লেখাপড়ার পাশাপাশি কেশব নিজেকে জড়িয়ে নেন সমাজসেবামূলক কাজে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন নিজেকে।

শিশুঅধিকার,বাল্যবিবাহ, ঝরেপড়া শিশুদের স্কুলে ফেরানো, স্যানিটেশন, যৌতুকসহ নানা বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির কাজে তিনি অনন্য। কেশবের এমন কর্মতৎপরতা নজর কাড়ে সবার। উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নে কেশব চন্দ্র রায়ের গ্রামভিত্তিক ১০টি দল আছে। এলাকার শিশু-কিশোররাই এর সক্রিয় সদস্য। বাল্যবিবাহের খবর পেলেই তারা ছুটে যান বিয়ে বন্ধ করতে। সামাজিক কাজ করতে গিয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। কাজ করতে গিয়ে কেশব বুঝতে পারেন, সামাজিক ব্যাধি দূর করতে হলে সবার আগে গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে হবে।কাজটি করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। যুবসমাজের নেতা ও রোল মডেল হিসেবে তার আন্তর্জাতিক সম্মাননা বাংলাদেশের জন্য বিরল গৌরব বয়ে এনেছে। বহু তরুণ- তরুণীদের স্বপ্ন দেখানো শিখিয়ে চলা এই তরুণ নিজেকেই যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তার পথচলায় এখন সঙ্গীদের বাড়ানো হাতে হাত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মন্ত্রই যেন পড়ছেন সবাই। তার এগিয়ে যাওয়া অনুপ্রাণিত করছে অনেককে। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওয়ার সব রকম পথেই হেঁটেছেন কেশব রায়।

এ.টি.ফয়সাল রাব্বি রাকিব
শিশু সাংবাদিক
এনসিটিএফ, নীলফামারী ।

আমার স্কুল জীবন

 

জীবনের  একটা   অধ্যায়ের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি । তারপরও নিজেকে প্রশ্ন করি কোথায় পৌঁছেছি আমি! কি আমার পরিচয় ? সে কারনেই কিছুটা স্মৃতি চারণ

মীরপুরের “লিটল ফ্লাওয়ার”নামক প্রতিষ্ঠানে ১/২ কেজি শ্রেনীতে ভর্তির মাধ্যমে আমার স্কুল জীবনের শুভ সুচনা ঘটে । এই স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত আমার ঠাই হয় । বাবার সরকারী চাকরী, হটাৎ একদিন সন্ধ্যে বেলা জানতে পারলাম খুব শীঘ্রই আমরা ঢাকা ত্যাগ করে রাজশাহী চলে যাব । তখনো বন্ধু চিনতে শিখিনি। নতুন বাসস্থানে যাওয়ার আনন্দে ২দিন ঠিকমত ঘুম হলনা । আমার রাজশাহী জীবন ছমাস পার হয়ে গেলো। পড়াশোনা খেলাধুলা সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো শুধু উত্তরের আবহাওয়া ছিল মারাত্মক বৈরি । থাকা হলোনা রাজশাহী এবার রওনা হলাম খুলনার দিকে।  ছমাস কিভাবে কেটে গেলো টের পেলাম না, সামনে তৃতীয় শ্রেণীর বিশাল  এক ভর্তি পরীক্ষা ! যেকরেই হোক ভাল স্কুলে ভর্তি হতেই হবে।

প্রথম পরীক্ষা “খুলনা পাবলিক কলেজ ” এর । প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম এই স্কুলের , পরিক্ষার আগের রাতে স্বপ্নও দেখে ফেললাম এবং আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে ভরতিও হয়ে গেলাম এখানেই । স্কুল জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যায়ের শুরু মূলত এখানেই, এখন আমি বন্ধু চিনতে শিখেছি , চিনতে শিখেছি নিজের পরিচয় । পাবলিক কলেজের কত আনন্দ কত ভালবাসা বন্ধুত্তের সম্পর্ক সব বুকে চেপে রেখে দুফটা চোখের জল সঙ্গী করে আবার রওনা হই ঢাকায়। “শেরে বাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়” হয় আমার নতুন পরিচয় । সামান্য দিনের পরিচয়ে , নতুন পরিবেশে  কিছু নতুন স্বপ্ন ,কিছু নতুন বন্ধু সব আবার মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছিল । থাকা হলনা ঢাকায় আবার প্রত্যাবর্তন চিরচেনা খুলনায়, কিন্তু এবার আর আমি ভেঙ্গে পড়িনি । পরিবেশ পাল্টাতে পাল্টাতে মনটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছিলো, নতুন পরিবেশ আমাকে একটুও ভীত করতে পারেনি। পুরনো বন্ধুদের ফিরে পেলাম কিন্তু ফিরে পেলাম না প্রিয় প্রতিষ্ঠান। “খুলনা পাবলিক কলেজের” শ্রধ্যিও প্রিন্সিপাল মহোদয় আমাকে ভরতি নিতে অস্বীকার জানালেন । বাধ্য হয়ে আমাকে “খুলনা জিলা স্কুল” ভর্তি হতে হল। পরগাছার মতো হাজির হলাম জিলা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের মাঝে । হয়তো এটিই আমার শেষ স্কুল। জেলা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের মাঝ থেকে আমিও ২০১৬ সালের এস,এস,সি  পরীক্ষার্থী।

কিন্তু খারাপ লাগার চেয়ে আনন্দের বিষয় এপর্যন্ত যেকটি পরিবেশে  আমি মিশেছি, আমি মিশেই আছি । সবাই আমার বন্ধু । সুখে দুঃখে যাকেই কাছে চেয়েছি তাকেই পেয়েছি । এই অপদার্থকে কেউ পর করে দেয়নি।  এক সময় খুব কষ্ট হত একটি স্কুলে পুরোটা স্কুল জীবন পার করতে না পারায়। কিন্তু এখন ভেবে গর্ব হয়আমি খুলনা পাবলিক কলেজের ছাত্র। আমি শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমি খুলনা জিলাস্কুলের ছাত্র।

আহনাফ রাহাত ইপ্তি

খুলনা