মহান মে দিবসের অঙ্গিকার হোক শিশু শ্রম বন্ধ করা।
মুসাব্বির হোসেন: শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, শিশুরাই গড়বে দেশ এসব কথা এখনো যেন ঝিমিয়ে রয়েছে বই এর পাতায়। এই ডিজিটাল প্রযুক্তির দুনিয়ায় সব নারী-শিশু-বৃদ্ধ-তরুণ-তরুনী সবাইকে হিসেব করা হয় অর্থের অংকে। শিশু কিশোরদের কাজে নেয়া যাবে না এমন কথা জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নানা সংগঠন গুলো বিভিন্ন কর্মশালা করছে শিশু নিয়ে আর সংগঠন গুলোর মধ্যে অন্যতম ভাবে কাজ করছে ন্যশনাল চিলড্রেন’স টাস্ক ফোর্স (এন.সি.টি.এফ) আমাদের একটাই বার্তা শিশুর অধিকার নিশ্চিত হোক , শিশু শ্রম বন্ধ হোক, শিশুদের ঝুঁকি পূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকুক । কিন্তু শিশুর অধিকার বিষয়ক আইন আমাদের দেশে কাগজে কলমে থাকলেও প্রয়োগ নেই কোথাও। বাস্তবতার দিকে একটু চোখ ফেরালেই দেখতে পাওয়া যায় এ শিশুদের বিরাট একটি অংশ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। কিন্তু অন্যদিকে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে ৩২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ১৮ বছরের নিচে কোন শিশু ঝুকি পূর্ণ কাজে নিয়োজিত করতে পারবেনা । কিন্তু বাসের হেলপার, ওয়েল্ডিং কারখানার কাজ, বিড়ি তৈরীতে, তুলা ও আশ জাতিয় শিল্পের কাজ, কামার শিল্প, রিক্সা, ভ্যান, সিএনজিঅটোরিক্সা, টমটম, নসিমন করিমন চালানো, বাসা বাড়ীর গৃহস্থালির কাজ সহ ২৯৫টি ঝুঁকি ও বিপদজনকপেশায় নিয়োজিত রয়েছে হাজারো শিশু। কাজ করতে গিয়ে এদের অনেকেই হাত-পা, চোখ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আবার কেউ কেউ ধিরে ধিরে হাপানী, শ্বাসকষ্ট,যক্ষা, ক্যান্সারের মতো মারাত্বক রোগেরশিকার হচ্ছে নিজের অজান্তেই। যে বয়সে যাদের হাতে থাকার কথা কলম,থাকার কথা কাঁধে খাতা বই, সেই হাতে শ্রমের হাতিয়ার, সেই কাঁধে দুর্ভাগ্যের বোঝা।
এমএমসির শিশু সাংবাদিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত।
ঢাকাস্থ মনসুরাবাদ আদাবর এ SPED-RRTC প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হওয়া ০৬-০৫-২০১৪ইং থেকে ০৭-০৫-২০১৪ইং ২দিন ব্যাপী আবাসিক শিশু সাংবাদিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে। গণমাধ্যম বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার (এম এম সি) আয়োজনে এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল (এসসিআই) এর সহযোগিতায় এ প্রশিক্ষণে ঢাকা বিভাগের ১০ টি জেলা এনসিটিএফ (ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্স) এর ২ জন করে নির্বাচিত মোট ১৮ জন শিশু সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ৯জন ছেলে শিশু ও ৯জন মেয়ে শিশু। এম এম সির প্রকল্প কর্মকর্তা সাইফ মাহদীর ব্যবস্থাপনায় এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনা ফেরদৌস মনির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ(পিআইবি) এর সহকারী সম্পাদক শাহেলা আক্তার। সহায়ক হিসেবে ছিলেন এমএমসির যুব স্বেচ্ছাসবেক মোঃ জামাল হোসেন (হৃদয়), এনসিটিএফ এর কেন্দ্রিয় যুব স্বেচ্ছাসেবক সুমনা ইসলাম শিল্পী। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী জেলাসমূহ হচ্ছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ফরিদপুর, জামালপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী। উক্ত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যক্ষ ভোটে ২ জন বিভাগীয় প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তারা হলো ঢাকা জেলার রমজান এবং রাজবাড়ী জেলার প্রভা। জেলা শিশু প্রতিনিধি হিসেবে যারা যারা থাকছেন, মাহিদুর রহমান (মানিকগঞ্জ), মুহিব (মাদারীপুর), রোমা (গোপালগঞ্জ), সাকিব (টাঙ্গাইল), অলি (গাজীপুর), আনিকা (ফরিদপুর), রমজান (ঢাকা), স্বরন (জামালপুর), ঝুমুর (শরিয়তপুর), অরিত্র (রাজবাড়ী) -মোঃ জামাল হোসেন (হৃদয়)।।
বরিশালকে শিশুবান্ধব নগরী প্রকল্প ঘোষণার ৩ বছরেও বাস্তবায়ন নেই !
সোহানুর রহমান : বরিশাল হবে দক্ষিন এশিয়ার প্রথম শিশু বান্ধব নগরী। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের এমন ঘোষণার সাড়ে ৩ বছর পর হয়ে গেলেও এটি বাস্তবায়নের ছাপ পড়ছেনা নগরীতে। নানাবিধ জটিলতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে শিশুবান্ধব নগরী বরিশালের পথচলা। শিশু বান্ধব নগরী ঘোষনা বাস্তবায়ন হবে নাকি শুধুই কথার ফুলঝুড়ি এ নিয়ে শংকিত খোদ এ অঞ্চলের শিশুরাই। শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে গঠিত কমিটিগুলোও রয়ে গেছে অকার্যকর। বিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব ডাঃ কাজী আলিমউল্লাহ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষপটের কারণে একটু ধীরগতিতে কাজ চলছে। তবে স্কুল পর্যায়ের অনেক কাজ ইতোমধ্যে করা হয়েছে।বরিশাল সিটি করপোরেশনের ঘোষণার সাড়ে ৩ বছর পাড় হলেও আজও শিশুবান্ধব নগরীর সুফল পাচ্ছেনা এ অঞ্চলের শিশুরা। অহরহ ঘটছে শিশু নির্যাতন। শিশু অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কমছেনা বাল্য বিবাহ। দারিদ্রতার কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিতরা এখনো জরিয়ে পড়ছে বিভিন্ন ঝুকিপুর্ন কাজের সাথে। বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর মোট জনসংখ্যার ৩৬ ভাগের বেশি শিশু। এসব শিশুদের উন্নয়ন, বিকাশ, সুরক্ষা, বিনোদন ও অধিকার নিশ্চিত করতে শিশুদের দাবীর প্রক্ষিতেই ২০১০ সালে বরিশাল সিটিকে শিশু বান্ধব নগরীর ঘোষনা করেন তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন। এ ঘোষনার কারণে তখন তিনি বহু প্রশংসা কুড়ালেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেননি বলে জানিয়েছে বিসিসি’র একাধিক সূত্র। শিশু বান্ধব নগরীর গড়ার জন্য ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়। তবে এর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি বিসিসি কর্তৃপক্ষ। ওই অর্থবছরেরই শিশুপার্ক নির্মান প্রকল্পের জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেটে রাখা হয়। একই ভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরেরও একই পকল্পের জন্য একই টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারনে প্রতি অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্ধ রাখা হলেও সমন্বয় করে কাজ গুলো করা হচ্ছে না। শিশু সংগঠক তাহসীন উদ্দীন জানান, আসুন গড়ি শিশু বান্ধব বরিশাল নগরী গড়ার জন্য ৪টি বস্তি (বঙ্গবন্ধু কলোনী, শিশু পার্ক কলোনী, স্টেডিয়াম কলোনী, পলাশপুর কলোনী) শিশুরা পরিদর্শন করে নগরীর শিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে শিশুদের প্রধান সমস্যাগুলো তুলে এনে গত সিটি নির্বাচনের সময় মেয়র প্রার্থীদের শিশুদের মুখোমুখি করা হয়। এরপর গবেষনা করে সংশ্লিষ্টদের সাথে মত বিনিময় করে চূড়ান্ত দাবী প্রস্তুত করে হয়েছে। দাবীগুলো হচ্ছে নগর শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগ ও তার কার্যালয়, শিশুদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও কার্যক্রম গ্রহন, নগর শিশু কাউন্সিল গঠন, শিশু হেল্প লাইন চালু, উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশু স্বার্থ নিশ্চিত করন, সৃজনশীলতা বিকাশে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহন, সমন্বয় কমিটি গঠন ও সমন্বয় সাধন। তাহসীন বলেন, এ দাবী গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের কাংক্ষিত নগরী গড়া সম্ভব। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান এএইচ তৌফিক আহমেদ জানান, প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তি কম হওয়ায় সবাই শিশু বান্ধব নগরী নিয়ে হতাশ হলেও উদ্যোগটি অনেক দূর গুছিয়ে আনা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন বস্তির স্কুল গুলোতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যায়ে লেট্রিন নির্মান করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে গতি হারিয়েছে। তিনি জানান, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে তেমন আগাতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ও আলাদা দপ্তর থাকা দরকার। যে দপ্তর শিশু বান্ধব নগরী গড়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এ দপ্তর না থাকায় প্রতি বাজেটে বরাদ্ধ রাখলেও কাজ করা যায়নি। বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, শিশু বান্ধব নগরীর কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে। তবে নগর শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়োগের শিশুদের দাবীকে অযৌক্তিক দাবী করেন তিনি। এব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে একটি শিশু বান্ধব নগরী গড়তে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে নগরীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিশুপার্কটিও তার আমলে নির্মিত বলে জানান তিনি। তবে সদ্য বিদায়ী মেয়র হিরন তার মালিকানাধীন শিশুপার্কটির প্রবেশ ফি ৮ টাকা থেকে ২০ টাকায় উন্নীত করেছেন বলে তিনি জানান। শিশু সংগঠক সেভ দ্যা কোষ্টাল পিপলের নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু জানান, শিশু বান্ধব নগরী ঘোষনার কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখন মুখ থুবরে পড়েছে। রাজনৈতিক বিচারে নয়, শিশুদের সার্থে বতমান মেয়র কাজ করলেই এ নগরী গড়া সম্ভব বলে তিনি জানান।
এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম শিশুবান্ধব জেলা ঝালকাঠি।
জেলার শিশু অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশের প্রথম শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে এগিয়ে চলছে শিশু বান্ধব জেলা ঝালকাঠির ভবিষ্যত।শিশুদের মাধ্যমে তাদের নিজ আধিকার রক্ষার দাবী দাওয়া জেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারনী মহল সহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে ঝালকাঠি জেলার শিশুরা বিরাট সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শিশুদের নিরন্তর এ্যাডভোকেসির ফলে ঝালকাঠি জেলার স্থানীয় প্রশাসন ও নীতি নির্ধারনী মহলও আন্তরিকতার সাথে শিশুদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সূত্রে প্রকাশ, ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন অনেক দিনের । এ স্বপ্ন যেমন শিশুদের, তেমনি শিশুদের নিয়ে যারা ভাবেন ও কাজ করেন তাদেরও । দীর্ঘ দিনের এ স্বপ্ন বাস্তবতায় মূর্ত হয়ে উঠে গত বছর ২১ ও ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু অধিকার প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মশালায় সচিব তারিক-উল -ইসলাম ও উপ-সচিব মো: আমানউল্লাহর উপস্থিতিতে। কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে ঝালকাঠির সাবেক জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাসের কাছে চাইল্ড পার্লামেন্ট প্যানেল স্পীকার সোহানুর রহমান ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে বিনির্মাণের জোড় দাবি জানায়। পরবর্তীতে শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ঝালকাঠি জেলাকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে বিনির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ জেলার সুধীজনদের মাঝে শিশু বান্ধব জেলা সর্ম্পকে ধারণা প্রদান ও অবগত করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু বান্ধব প্লাটফর্ম সভা । সভায় ঝালকাঠি শিশু বান্ধব জেলার খসড়া ’’ধারণা পত্র’’ সকল সদস্যদের প্রদান করা হয়েছে । পরর্বর্তীতে শিশু বান্ধব জেলা কমিটির মাধ্যমে মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে চুড়ান্ত ধারণা পত্র প্রণয়ন করা হবে জানিয়েছেন জেলা শিশু সংগঠক নারগীস সুলতানা। মূলতঃ শিশু বান্ধব জেলায় শিশু অধিকার সনদকে চেতনায় ধারণ করে জাতীয় শিশু নীতি ২০১০ এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে তাদের আইন, কর্মসূচি ও বাজেট প্রনয়ণ করবে। শিশু বান্ধব জেলা গড়া একটি সমন্বিত এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা বিভিন্ন সেক্টরের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। এখানে জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অগ্রাধিকার পাবে এবং অগ্রগতি পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক বছর নতুন নতুন বিষয় ও কর্মসূচি সন্নিবেশিত হবে। তবে শিশু বান্ধব জেলা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া হিসাবে আশু করণীয় ধাপসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. শাখাওয়াত হোসেন জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জেলার শিশু একাডেমী, এনসিটিএফ, সরকারী-বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠান কার্যকরী ভূমিকার প্রশংসা করেন। শিশুদের উন্নয়নে কাজ করতে সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ঝালকাঠিকে শিশু বান্ধব জেলা হিসেবে শিশুদের মতামত প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের মধ্যে ঝালকাঠিই প্রথম জেলা যে জেলার উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি জেলা উন্নয়ন সভায় সদস্যপদ পেয়েছে।এতে করে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহন সহ তাদের মতামত প্রদান করতে পারছে জেলার শিশুরা। ঘোষনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে ঝালকাঠি জেলা। এদিকে শিশুবান্ধব জেলা হিসেবে ঘোষনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করা জাতীয় পর্যায়ের শিশু সংগঠন ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স শিশু বান্ধব জেলা বির্নিমানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলছে। সংগঠনটির শিশু প্রতিনিধিরা জেলা সার্বিক শিশু অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারনী মহলে নিরন্তর এ্যাডভোকেসি করে যাচ্ছে।জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটিতে সরকারের সাময়িক প্রতিবেদনের সাথে জাতীয়ভাবে শিশুদের প্রদত্ত বিকল্প প্রতিবেদনে প্রনয়নেও ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটির ঝালকাঠির শিশু নেতারা। একটি কর্মশালার আয়োজন করা যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিশু প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিশু সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী, দাতাগোষ্ঠী প্রতিনিধি, শিক্ষকসহ শিশুদের নিয়ে ভাবেন ও কাজ করেন তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো প্রয়োজন। এই কর্মশালায় শিশু বান্ধব জেলার ধারণাসমূহকে কর্মসূচীতে রূপান্তর করা যেতে পারে। কর্মশালায় সংশিষ্ট বিভাগ ও ব্যক্তিবগের্র সমন্বয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরী করা দরকার। যারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরী করবে। বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রণীত পরিকল্পনা ও সুপারিশসমূহ সমন্বিত ভাবে গ্রন্থিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে।জেলা প্রশাসক নেতৃত্বে সংশিষ্ট সকল বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটি শিশু বান্ধব জেলা গড়ার পরিকল্পনা সমূহকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। শিশু বান্ধব জেলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, উপকরণ, যানবাহনসহ জেলা প্রশাসনের একটি সেল স্থাপন করা দরকার। তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ রক্ষণাবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য স্থাপিত সেলে একটি কম্পিউটারাইজ ডাটা বেইজ প্রতিস্থাপন করা এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।সহজে বাস্তবায়নযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আশিকুর রহমান
বরিশালে বেড়ে চলছে শিশুশ্রম : বন্ধে নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ।
বরিশাল জেলার সকল উপজেলার সর্বত্রই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রমিকের ব্যবহার দিনকে দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকান আর ওয়েল্ডিং দোকানগুলোতে দেদারছে চলছে শিশু শ্রমিকের ব্যবহার। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উন্নয়নমুখি কিছু কর্মসূচির কথা বলা হলেও শিশুশ্রম বন্ধে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই যেন নেই কোনো মাথা ব্যথা। নেই কোনো আইনি পদক্ষেপ। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে অল্প বয়সী এসব শিশুরা অমানবিক পরিশ্রম করছে। আবার অনেক শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থেকে বড় ধরনের দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করে। বরিশাল বিভাগসহ জেলার অধিকাংশ অঞ্চলের ইটের ভাটা, লোহার তৈরি মেশিনের কারখানা, লেদ মেশিন কারখানায়, বাস, ট্রাক ও লঞ্চ মেরামতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক শিশু। এছাড়াও ভিক্ষাবৃত্তি ও টোকাইয়ের কাজে নিয়োজিত প্রায় অগনিত শিশু। এসব শিশুদেরকে সুরক্ষার জন্য বা লেখাপড়া করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দেশের সরকারের একাধিক সংস্থা বা বিভিন্ন নামি দামী এনজিও কাজ করলেও তাদের সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। বরিশাল নগরীর ৫ নং ওয়ার্ড পলাশপুর, মোহাম্মদপুর ও রসুলপুর চরে বসবাসরত প্রায় লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে সুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত প্রায় লক্ষাধিক শিশু রয়েছে। এসব শিশুরা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা তাদের পরিবারের শিশুদের একটু বেড়ে ওঠার আগেই পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় ঝুঁকিপূর্ন কাজে। অনেক সময়ে এসব শিশুর শারীরিক গঠন ও সুষ্ঠু ভাবে হয় না। কিছু কিছু পরিবারের সদস্যরা নিজেরা কর্মক্ষম হওয়ার পরেও ঘরে বসে থেকে শিশুদের দিয়ে কাজ করিয়ে সংসারের জোগান দিচ্ছে অথচ এর ফলে যে ওই শিশুর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় ভবিষৎ সেদিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, অনেক পরিবারের পিতা-মাতার অবহেলায় ঝড়ে পরছে তার অবুঝ শিশুটির জীবন। হয়ে যাচ্ছে পথ শিশু না হয় হারিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভূবনে। এ ছাড়ারাও শিশুদের দিয়ে মাদক বহন করা সহজ ও প্রশাসনের নজরের বাইরে থাকায় নগরীর কেডিসি বালুর মাঠ কলোনী (বস্তি), ভাটার খাল কলোনী (বস্তি) ও পলাশপুর বস্তির কিছু শিশুদের দিয়ে সুকৌশলে মাদক বহন করাচ্ছে সমাজের মাদক ব্যবসায়ীরা। বরিশালে গড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ন শিশুর ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা। সরকার শিশুদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করলেও পরিবারের সদস্যদের অবহেলা, অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও পরিবেশের কারনে এসব পরিবারের শিশুরা এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎতের দিকে। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা পংঙ্কজ রায় চৌধুরীর সাথে আলাপ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানায়, বরিশাল জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা’র অধিনে ঝুঁকিপূর্ন শিশু বা ঝড়ে পরা শিশুদের নিয়ে কাজ করার কোন বাজেট বা কার্যক্রম নাই। এটি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিশুদের নিয়ে (ই ই সি আর) প্রকল্প স্টাইপেন কাজ করে। তবে তারা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অধীনে বেশ কয়েকটি বস্তি বা কলোনীর ঝুঁকিপূর্ন ও সুবিধা বঞ্চিত প্রায় ৩ শতাধিক শিশুদের তাদের আওতায় এনে শিক্ষা ও সুষ্ঠু ভাবে বেড়ে ওঠার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা সরকারের একটি নিয়মিত প্রকল্প। বরিশাল শিশু অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি জীবন কৃষ্ণ দে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা বরিশালে ১০ হাজারের ওপরে। দেশের অধিকাংশ শিশুর পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, তাই শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন। তবে যতটা সম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত না করে শিশুদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত। এই বিষয়ে ইউনিসেফ ডিভিশনাল চীফ এ.এইচ. তৌফিক আহমেদ জানালেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না । সরকারিভাবে কোনো আন্তরিকতা না থাকাই এর মূল কারণ। এছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয়ে যে শিশুশ্রম নিয়ে মনিটরিং সেল আছে তারা যদি শক্তিশালী ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে প্রচারণা চালাতো তাহলে দ্রুত এই বিষয়টির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যেত বলে জানালেন এই বিশেষজ্ঞ। আইএলও সনদে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল । কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় আর সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন অংশীদারদের আন্তরিকতা বাড়িয়ে সামাজিক জাগরণের মাধ্যমেই শিশুশ্রম প্রতিরোধে সাফল্য সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অপরদিকে বরিশালের ঝড়ে পড়া শিশুদেরকে এখনই সরকারের সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের কে সুষ্ঠু ভাবে বেঁেচ ওঠার ও শিক্ষার মাধ্যমে বরিশালকে একটি শিশু বান্ধব নগরী হিসাবে গড়ে তোলার আহবান জানান বরিশালের সচেতন মানুষ। সোহানুর রহমান
যশোরে এনসিটিএফ নির্বাচন সম্পন্ন।
যশোরে ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্সের (এনসিটিএফ) জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন গত ১৬ মার্চ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে সোনিয়া আফরিন সোমাকে সভাপতি ও কৌস্তব জ্যোতি সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার যশোর শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার ওয়ার্ল্ডভিশনের প্রোগ্রাম অফিসার জাকিয়া সুলতানা, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সেলিম আহমেদ শাওন ও জান্নাতুল ফেরদৌস রিমি। কমিটির অন্য নির্বাচিত সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি আহসান কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারজানা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ লোমাত সহিবা, চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্য কাজী ইফতি আরাফাত ও ইরফাত জাহান, ইচ্ছা মিডিয়া দলের সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস শ্রাবণী ও মাসুম সুজন এবং সাধারণ সদস্য ইসরাত জাহান ঐশী ও মোহাম্মদ হানিফ সরদার। নির্বাচন শেষে বিদায়ী সভাপতি শামিম আহমেদ নবনির্বাচিত কমিটির নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।